শুক্রবার, ১৪ মার্চ ২০২৫, ১১:৫৪ পূর্বাহ্ন
ডেস্ক রিপোর্ট : ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজার উত্তরাঞ্চলে চলমান সংঘর্ষের মধ্যে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী কামাল আদওয়ান হাসপাতালের উপর হামলা চালিয়ে তা ধ্বংস করেছে। এই ঘটনায় স্থানীয় প্রশাসন থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। হাসপাতাল ধ্বংসের পাশাপাশি মানবিক সংকট ক্রমশ জটিল আকার ধারণ করছে।
গত ২৪ ঘন্টায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় নিহত হয়েছে ৩৭ ফিলিস্তিনি এবং আহত প্রায় ৯৮ জন।ইসরায়েলি সেনারা গাজার কামাল আদওয়ান হাসপাতালে অভিযান চালিয়ে হাসপাতালের অধিকাংশ অংশ পুড়িয়ে দেয়। স্থানীয় প্রশাসন এই হামলাকে “বর্বর” বলে আখ্যা দিয়েছে। হাসপাতালের কর্মীদের একাংশ, যার মধ্যে ডিরেক্টর হুসাম আবু সাফিয়াও রয়েছেন, তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। রোগীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে এখনও কোনো তথ্য মেলেনি।
গাজার ওপর ইসরায়েলি অব্যাহত হামলার কারণে তীব্র মানবিক সংকট তৈরি হয়েছে। শুক্রবার জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টেফানি ট্রেম্বলে এই হামলাগুলো নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি জানান, গাজার বিভিন্ন স্থানে হামলায় বহু মানুষ নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, এই ধ্বংসযজ্ঞে হাসপাতালের প্রায় সকল পরিষেবা বন্ধ হয়ে গেছে। জাতিসংঘের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) জানিয়েছে, ইসরায়েলের এই “সুনিয়ন্ত্রিত ধ্বংসযজ্ঞ” গাজার জনগণের জন্য এক প্রকার মৃত্যুদণ্ড। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা UNRWA সতর্ক করেছে যে, অবিলম্বে মানবিক সহায়তা নিশ্চিত না হলে আরও শিশুরা প্রচণ্ড শীতের কারণে মারা যাবে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া সংঘর্ষে গাজায় প্রায় ৪৫,৪৩৬ জন নিহত এবং ১,০৮,০৩৮ জন আহত হয়েছে। একই সময়ে হামাসের আক্রমণে ইসরায়েলে ১,১৩৯ জন নিহত এবং ২০০ জনের বেশি অপহৃত হয়েছে।
জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে এ পর্যন্ত বেশ কয়েকবার গাজায় সামরিক অভিযান বন্ধের জন্য ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে আহ্বান জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে জাতিসংঘের আদালত নামে পরিচিত ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে (আইসিজে) ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার মামলাও দায়ের করা হয়েছে।তবে নেতানিয়াহু স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, হামাসকে পুরোপুরি দুর্বল ও অকার্যকর করা এবং জিম্মিদের মুক্ত করার আগ পর্যন্ত অভিযান চলবে গাজায়।
এই পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের হস্তক্ষেপ অত্যন্ত প্রয়োজন। অবিলম্বে সংঘর্ষ বন্ধ এবং মানবিক সহায়তার অবাধ প্রবাহ নিশ্চিত করার উদ্যোগই এই সংকট নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে।